জোঁক
জোঁক বলতে এমন এক ছোট প্রাণীকে বোঝায় যারা মূলত প্রাণীর দেহ থেকে রক্ত চুষে খায়। এদের শরীরে কোন ধরনের হাড় না থাকলেও এদের মুখের শক্তিশালী চোষক দিয়ে নিজেদের দেহের ওজনের কয়েকগুণ বেশি রক্ত চুষে খেতে পারে। কিছু জোঁক প্রাণীর শরীর থেকে এমনভাবে রক্ত চুষে খেতে সক্ষম যে সেই প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত শরীরে নাও থাকতে পারে। এমন বৈশিষ্ট্যের জোঁককে খুব হিংস্রতার প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
জোঁক সময়গত পরিসীমা: সিলুরিয়ান–বর্তমান | |
---|---|
Hirudinaria medicinalis | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণী জগৎ |
পর্ব: | Annelida |
শ্রেণী: | Clitellata |
উপশ্রেণী: | Hirudinea Lamarck, 1809 |
Infraclasses | |
Acanthobdellidea |
রক্তচোষা জোঁক ও তাদের জাতভাইরা কেঁচোর মত এনিলিডা পর্বের জীব। এরা এনিলিডা পর্বের হিরুডিনিয়া উপপর্ব গঠন করে।
কেঁচোর মত এদেরও ক্লাইটেলাম আছে ও গমনাঙ্গ সিটে (setae)।
আদিকাল থেকে রক্তচোষা জোঁকেদের (যেমন হিরুডিনারিয়া মেডিসিনালিস) রক্ত জমাট বাঁধা (blood cloting) বন্ধ করার জন্য চিকিৎসায় ব্যবহার হয়েছে। তঞ্চন বন্ধ করার জন্য রক্তচোষা জোঁকের লালায় হিরুডিন নামক রক্ত জমাট রোধক(anticoagulant) পেপটাইড ক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষায় এগুলোকে "খেউরা জোঁক" বা " চীনা জোঁক" বলে। স্যাঁতসেতে ভিজেমাটি এদের পছন্দের আবাসস্থল। মাঝারি ও ছোট আকারের গবাদিপশু'র রক্তশূন্যতার কারণ এই জোঁক। একটি ছোটবাচ্চাকে যদি তিন/চারটি জোঁক একত্রে ধরে, তবে সেই বাচ্চাটি রক্তশূন্যতার জন্য মারাও যেতে পারে। বগুড়া জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এলাকাগুলোতে এই জোঁক প্রচুর দেখা যায়। আমাদের গাড়ল-দুম্বা বা ভেড়ার পায়ের খুর ও ঘাস খাওয়ার সময় নাকের ভেতরে ঢুকে পড়ে এগুলো। ত্বকে ছিদ্র করে রক্ত শুষতে থাকে, যতক্ষণ না এগুলোর পেট ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়ে নিজ থেকেই পড়ে যায়। এরা যেটুকু রক্ত খায় তাতে কোন সমস্যা হয়না। কিন্তু রক্ত খেতে যে ছিদ্রটি করে, সেই ছিদ্র দিয়ে অনেকটা রক্ত বেরিয়ে যায়। গ্রামবাংলায় পশুপালনের বড় অন্তরায় এই রাবারসদৃশ প্রাণীটি। এদের উৎপত্তি স্থল হলো গণচীন। ধারণা করা হয়, অনেককাল পূর্বে কয়লার মাধ্যমে এই জোঁক বাংলাদেশে আসে।
দেহ থেকে জোঁক অপসারন
সম্পাদনাদেহ থেকে জোঁক অপসারনের সবচেয়ে ভাল উপায় হল হাতের দুই আঙ্গুল ব্যবহার করে জোঁকের মুখের চোষক অংশের সিল ভেঙে দেওয়া।
জোঁক অপসারনের জন্য সাধারণত এর গায়ে সিগারেটের ছ্যাকা, খাবার লবণ, ভিনেগার, সাবান, ক্ষারীয় রাসায়নিক পদার্থ, লেবুর রস বা কিছু কার্বনেট পানীয় ব্যবহৃত হয়। তবে এ সব পদ্ধতি চিকিৎসকরা ব্যবহার করতে নিষেধ করেন। কারণ এসব ব্যবহার করলে জোঁক তার পাকস্থলীর সব কিছু বমি করে দেয়, যা কিনা মানব দেহের ক্ষতস্থানে রোগের সংক্রমণ করতে পারে।[১] হাত দিয়ে টেনে জোঁক অপসারন করাও ঠিক নয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Victorian Poisons Information Centre: Leeches Victorian Poisons Information Centre. Retrieved on 2007-07-28.
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- Medicinal Leech
- Leech fact sheet, Australian Museum
- North American leeches
- Leeches Turkey ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে
- How to remove a leech
- Biotherapy with leeches and maggots
- চিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস।
- Leeches in Reconstructive Surgery