বীমা হল অর্থের বিনিময়ে জীবন, সম্পদ বা মালামালের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির ন্যায়সঙ্গত ও নির্দিষ্ট ঝুঁকির স্থানান্তর। এর মাধ্যমে ব্যক্তি বা বীমা প্রতিষ্ঠান অর্থের (প্রিমিয়ামের) বিনিময়ে মক্কেলের আংশিক বা সমস্ত সম্ভাব্য ঝুঁকি গ্রহণ করে থাকে। এটি অনিশ্চিত ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার একটি অংশ।

একটি ডাচ বীমা কোম্পানির ১৯০০-১৯১৮ সালের একটি বিজ্ঞাপন পোস্টার যেখানে একজন সাঁজোয়া নাইট চিত্রিত হয়েছে

বর্ণনা

সম্পাদনা

বীমা কোম্পানিগুলোকে প্রিমিয়াম প্রদানের মাধ্যমে বীমাকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সব ধরনের সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে মুক্ত থাকে এবং অসংখ্য বীমাকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে বীমা কোম্পানিগুলো মূলধন বৃদ্ধি করে। বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা ছাড়াও ব্যাক্তিগতভাবে অর্থ সঞ্চয় করে সম্ভাব্য ঝুঁকির দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা যায়।[] বীমা প্রক্রিয়া, ক্ষয়ক্ষতির ধরন এবং ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিছু মূলনীতি মেনে চলতে হয়।

বীমা যোগ্যতা

সম্পাদনা

বেসরকারী কোম্পানী কর্তৃক বীমা করানোর জন্য সাতটি বীমাযোগ্যতার মূলনীতি মেনে চলতে হয়ঃ

একই ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে এমন অনেক উপাদানের অস্তিত্বঃ যেহেতু একটি বীমা কোম্পানি ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে তাই বাস্তবে সেই ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে এমন উপাদান প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান থাকতে হবে। যেমনঃ 'লয়েডস অফ লন্ডন' জনপ্রিয় শিল্পী এবং খেলোয়াড়দের জীবন এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের বীমা করানোর জন্য বিখ্যাত। এখানে লয়েডস অফ লন্ডন যেসব উপাদানের বীমা করায় সেগুলো বাস্তব জীবনে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান এবং এই উপাদানগুলো একই ধরনের না হলেও এগুলোকে একই শ্রেণিতে ফেলা যায়।
নির্দিষ্ট ক্ষয়ক্ষতিঃ বোঝাতে বীমা কোম্পানি শুধুমাত্র একটি বা একাধিক নির্দিষ্ট ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ থাকবে। যেমনঃ একটি গাড়ির যদি শুধু অগ্নি বীমা করা থাকে তাহলে বীমা কোম্পানি গাড়িটি হারিয়ে গেলে কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে না।
দূর্ঘটনাজনিত ক্ষতিঃ অর্থাৎ যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হবে তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রনের বাইরে থাকবে। যদি গাফিলতির কারণে কোনো ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয় তাহলে এর ক্ষতিপূরণ নাও পাওয়া যেতে পারে।
বৃহৎ আকারের ক্ষতিঃ ক্ষতির পরিমাণ অবশ্যই বীমাকৃত ব্যাক্তির সাপেক্ষে যুক্তিযুক্ত হতে হবে।
প্রিমিয়াম অবশ্যই সাশ্রয়ী হতে হবেঃ সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যতই ব্যাপক হোক না কেনো, বীমা প্রিমিয়াম অবশ্যই বীমা গ্রহণকারীর নাগালের মধ্যে থাকতে হবে।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অবশ্যই পরিমাণযোগ্য হতে হবেঃ যেহেতু সবধরনের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া যায় না এবং বীমা কোম্পানি শুধুমাত্র টাকার অঙ্কে ক্ষতিপূরণ দিতে পারে তাই সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি টাকার অঙ্কে পরিমাপ করতে হবে।
প্রাকৃতিক মহাদূর্যোগের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ সীমিত হবেঃ যেমনঃ বন্যা বা ভূমিকম্পের ফলে যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, বীমা কোম্পানিগুলো এই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া থেকে বিরত থাকে কারণ এত ব্যাপক পরিমাণ ক্ষতিপূরণ কোনো একক বীমা কোম্পানির পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয় না।

আইনসিদ্ধতা

সম্পাদনা
চূড়ান্ত সদ্বিশ্বাসের নীতিঃ
বীমাযোগ্য স্বার্থের নীতিঃ
ক্ষতিপূরণের নীতিঃ
স্থলাভিষিক্তকরন নীতিঃ
অংশগ্রহণের নীতিঃ
ক্ষতির অব্যাহতিকরন নীতিঃ
৭ সেবা নীতিঃ
৮ দ্রুত দাবি পুরনের নীতিঃ
৯ সেলামী নির্ধারন নীতিঃ

ক্ষতিপূরণ

সম্পাদনা

বীমার প্রকারভেদ

সম্পাদনা

জীবন বীমা

সম্পাদনা

জীবন বীমা হল মানুষের মৃত্যুজনিত ঝুঁকি, ক্ষতি, বিপদ হস্তান্তরে বা এড়ানোর একটি কৌশল। বীমাগ্রহীতার মৃত্যু অথবা বার্ধক্য অবস্থায় বীমাগ্রহীতা অথবা তার পরিবার পরিজনদের আর্থিক ক্ষতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আধুনিক যুগে জীবন বীমা একটি কার্যকর মাধ্যমে হিসেবে কাজ করে।[][]

বীমাগ্রহীতার নির্দিষ্ট হারে প্রিমিয়াম পরিশোধের বিনিময়ে বীমাকারী প্রতিষ্ঠান বা বীমা কোম্পানীর বা মেয়াদ শেষে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে অথবা তার মৃত্যুর পর পূর্ব নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ পরিশোধের যে প্রতিশ্রুতি দেয় এ চুক্তিগত ব্যবস্থাকে জীবন বীমা বলা হয়। সুতরাং জীবন বীমা হলো বীমাগ্রহীতা এবং বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পাদিত একটি আধুনিক চুক্তি যাতে সুনির্দিষ্ট প্রিমিয়াম পরিশোধের প্রতিদান হিসেবে বীমাকারী প্রতিষ্ঠান বীমাগ্রহীতাকে অথবা তার উত্তরাধিকারীদের বা তার মনোনীত ব্যক্তিকে তার মৃত্যুর পর অথবা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে।[]

নৌ বা সামুদ্রিক বীমা

সম্পাদনা

নৌপথে পরিচালিত জাহাজ, জাহাজের পণ্য বা মাশুল বীমাপত্র নির্দিষ্ট বিপদ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বীমাকারী ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা দিয়ে যে চুক্তি সম্পাদন করে তাকে নৌ বীমা বা সামুদ্রিক বীমা বলে। Halsbury এর মতে যে চুক্তি দ্বারা নির্দিষ্ট পন্থায় নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত সামুদ্রিক ক্ষতি অর্থাৎ নৌ-অভিযান সংক্রান্ত ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দেয় তাকে নৌ বা সামুদ্রিক বীমা বলে।

অগ্নি বীমা

সম্পাদনা

আর.এস. শর্মার মতে,অগ্নি বীমা হচ্ছে এমন একটি চুক্তি যেখানে একপক্ষ প্রতিদানের বিনিময়ে অপর পক্ষের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি বহন করতে সম্মত হয় যা অগ্নি দ্বারা কোন কিছুর ক্ষতি বা ধ্বংসকে বোঝায়। এম.এন মিশ্রের মতে, অগ্নিবীমার এমন একটি ব্যবস্থা যা অগ্নিকাণ্ডে সংঘটিত ক্ষতিপূরণ করে।

অগ্নিবীমার উদ্দেশ্য: ১. ক্ষতিপূরণ:অগ্নিকাণ্ডের দ্বারা সৃষ্ট বা বিনষ্টের ক্ষতি পূরণ করা অগ্নিবীমার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। অগ্নিকাণ্ডে বিমাগ্রহীতার বীমাকৃত সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বীমাকারীর উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে। ২. বিনিয়োগ সৃষ্টি:বীমা কোম্পানিগুলো অগ্নি বীমার প্রিমিয়াম বাবদ যে অর্থ লাভ করে তার একটা বড় অংশ পুনরায় বিভিন্ন ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে। এরূপ বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বীমাকারী বীমা ব্যবসায় লিপ্ত হয়। ৩. ঝুঁকি বণ্টন:যেহেতু অগ্নি বীমাও একজনের ক্ষতিকে সমাজের অন্যান্য লোকদের মধ্যে বণ্টন করে কোন ব্যক্তিকে এককভাবে বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। ৪. অন্যান্য বীমার পরিপূরক:জীবন বীমা,অগ্নি বীমা, নৌ বিমা, দুর্ঘটনা বীমা, ইত্যাদি কোন বিমায় এককভাবে বীমার সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনা।তাই অন্য বীমার পরিপূরক হয়ে বিমার বিশেষ অংশের দায়িত্ব ও ঝুঁকি গ্রহণ এবং সেবাপ্রদান করা অগ্নিবীমার অপর একটি উদ্দেশ্য।

অগ্নিবীমা শ্রেণিবিভাগ: ১. মুল্যায়িত বীমাপত্র: চুক্তি সম্পাদনকালে বীমাকৃত বিষয়বস্তুর মূল্য নির্ধারণ না করে যে অগ্নিবীমা পত্র গৃহীত হয় তাকে মূল্যায়িত বীমাপত্র বলে। এরূপ বীমাপত্র পরে সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণের শর্ত লিপিবদ্ধ থাকে। ২. অমূল্যায়িত বীমাপত্র: বীমাচুক্তি সম্পাদনকালে বীমাকৃত বিষয়বস্তুর মূল্য নির্ধারণ না করে যে অগ্নি বীমা পত্র গ্রহণ করা হয় তাকে অমূল্যায়িত বীমাপত্র বলে। এরূপ বীমাপত্র পরে সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণের শর্ত লিপিবদ্ধ থাকে। ৩. নির্দিষ্ট বীমাপত্র: এরূপ অগ্নি বীমা পত্রের নির্দিষ্ট সম্পত্তির উপর নির্দিষ্ট মূল্যে চুক্তি সম্পাদিত হয় ক্ষতি সংঘটিত হলে বীমাকারীর নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করে থাকে।ধরা যাক, একটি গুদামে রক্ষিত পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে তিন লক্ষ টাকার পণ্যের উপর একটি বীমাপত্র গ্রহণ করা হয় অগ্নিকাণ্ডে চার লক্ষ টাকার পণ্য ভস্মীভূত হলেও বীমাকারী তিন লক্ষ টাকায় ক্ষতি পূরণ করে। ৪. সার্বিক বীমাপত্র: এরূপ বীমাপত্র অগ্নি কাণ্ড ছাড়াও চুরি লোড কর্মী দ্বারা সংঘটিত ক্ষতি প্রভৃতি কারণে নির্দিষ্ট সম্পদের ক্ষতি পূরণের নিশ্চয়তা দেয়া হয়। ৫: অগ্নি নিবারণী বিকল বীমাপত্র:অগ্নি নিবারণী যন্ত্র বিকল হয়ে বীমাকৃত সম্পদ ও সম্পত্তির ক্ষতি হলে তা পূরণের জন্য যে বীমাপত্র গৃহীত হয় তাকে অগ্নি নিবারণী বীমাপত্র বলে।

পুনঃবীমা

সম্পাদনা

পুনঃবীমা হলো একটি ব্যবস্থা যেখানে একটি বীমা প্রতিষ্ঠান তার ঝুঁকির কিছু অংশ অন্য একটি বীমা প্রতিষ্ঠানের কাছে স্থানান্তর করে। এটি মূল বীমা প্রতিষ্ঠানের উপর আর্থিক চাপ কমাতে এবং তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠান মূল বীমাকারীর ঝুঁকির অংশ গ্রহণ করে এবং এর বিনিময়ে নির্দিষ্ট প্রিমিয়াম পায়। এর ফলে, মূল বীমা প্রতিষ্ঠানগুলি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পায় এবং তাদের পুঁজির উপর কম চাপ পড়ে, যা তাদের আরও নতুন ব্যবসা গ্রহণ করার সুযোগ প্রদান করে।[] বাংলাদেশে একমাত্র পুনঃবীমা কোম্পানি হচ্ছে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন

সামাজিক ও অন্যান্য ধরনের বীমাসমূহ

সম্পাদনা

সামাজিক প্রেক্ষাপট

সম্পাদনা

বয়োবৃদ্ধতা,বেকারত্ব, স্বাস্থ্যহানি ইত্যাদি কারণে ব্যক্তিকে আর্থিকভাবে রক্ষা করার জন্য প্রচলিত বীমার বাইরে যে বিশেষ বীমার প্রচলন ঘটেছে তাকে সামাজিক বীমা বলে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Gollier C. (2003). To Insure or Not to Insure?: An Insurance Puzzle[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]. The Geneva Papers on Risk and Insurance Theory;).
  2. "Insurance"। turtlemint.com। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  3. Oviatt, p. 181
  4. "Life Insurance"। Investopedia। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  5. "পুনঃবীমা কি? কেন? কিভাবে?"www.InsuranceNews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০২৪ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা
  NODES
Association 2