বাষ্প
পদার্থবিজ্ঞানে, বাষ্প (আমেরিকান ইংরেজি: vapor ; ব্রিটিশ ইংরেজি: vapour) হচ্ছে গ্যাসীয় দশায় বিদ্যমান কোন পদার্থ, যার তাপমাত্রা ঐ পদার্থের সংকট তাপমাত্রার (critical temperature) চেয়ে নিম্নতর।[১] এর মানে হল বাষ্পের তাপমাত্রা না কমিয়ে, শুধুমাত্র চাপ বৃদ্ধির মাধ্যমে ঘনীভূত করে একে তরলে রূপান্তরিত করা যায়। বাষ্প আর অ্যারোসল - দুটি ভিন্ন জিনিস।[২] অ্যারোসল হচ্ছে কোন গ্যাসের মধ্যে বিদ্যমান কঠিন, তরল বা বায়বীয় পদার্থের ক্ষুদ্র কণাসমূহের একটি মিশ্রণবিশেষ।[২]
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পানির সংকট তাপমাত্রা হচ্ছে ৬৪৭ K (৩৭৪ °সে; ৭০৫ °ফা), যা হচ্ছে পানির জন্য সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যেখানে তা তরল দশায় থাকতে পারে। বায়ুমণ্ডলে সাধারণ তাপমাত্রার সীমার মধ্যে, গ্যাসীয় পানি (জলীয় বাষ্প হিসেবে পরিচিত) ঘনীভূত হয়ে তরলে পরিণত হবে যদি এর আংশিক চাপ পর্যাপ্তভাবে বাড়ানো যায়।
বাষ্প কোন তরল (অথবা কঠিন) পদার্থের সাথে সহাবস্থান করতে পারে। যখন এটা সত্য হয়, তখন দশা দুটি সাম্যাবস্থায় থাকবে, এবং গ্যাসের আংশিক চাপ এবং সাম্যাবস্থায় থাকা তরলের (অথবা কঠিনের) বাষ্পচাপ পরস্পর সমান হবে।[১]
বৈশিষ্ট্যাবলি
সম্পাদনাবাষ্প বলতে কোন পদার্থের এমন গ্যাসীয় দশা নির্দেশ করে যেখানে ঐ একই পদার্থ তার সংকট তাপমাত্রার চেয়ে নিম্নতর তাপমাত্রায়, তরল কিংবা কঠিন দশাতেও বিরাজমান থাকতে পারে। যেমন- পানির সংকট তাপমাত্রা ৩৭৪ °সে (৭০৫ °ফা; ৬৪৭ K); সর্বোচ্চ এই তাপমাত্রা পর্যন্ত পানি তরল দশায় থাকতে পারে। যদি বাষ্পের সাথে তরল অথবা কঠিন দশার সংস্পর্শ থাকে, ঐ দশাদ্বয় পরস্পর সাম্যাবস্থায় থাকবে। গ্যাস শব্দটি দ্বারা সংকোচনযোগ্য প্রবাহী দশা নির্দেশ করা হয়। গ্যাসের বিদ্যমান তাপমাত্রায় যদি ঐ গ্যাসের কোন তরল অথবা কঠিন দশার অস্তিত্ব না থাকে, তাহলে ঐ গ্যাসকে স্থির গ্যাস বলা হয়, যেমন- গতানুগতিক পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রায় বাতাস। কোন তরল কিংবা কঠিন পদার্থ হতে বাষ্প নির্গত হতে হলে যে তাকে ফুটতে হবে, এমন কোন কথা নেই।
মেঘ গঠন এবং ঘনীভবনের মত পরিচিত প্রক্রিয়াসমূহের সাথে বাষ্প জড়িত। গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফিতে, কোন তরলের নমুনা থেকে পাতন এবং হেডস্পেস নিষ্কাশন প্রযুক্তির মত ভৌত প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে বাষ্প ব্যবহৃত হয়।
কোন বাষ্পের উপাদান অণুসমূহের মধ্যে স্পন্দন, ঘূর্ণন এবং স্থানান্তর (translational) গতি বিদ্যমান থাকে। গ্যাসের গতিতত্ত্বে এই গতিসমূহের প্রভাব বিবেচনা করা হয়।
বাষ্প চাপ
সম্পাদনাবাষ্পচাপ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোন তরল অথবা কঠিন কর্তৃক সাম্যাবস্থায় প্রযুক্ত চাপ। সাম্যাবস্থায় কোন তরল অথবা কঠিনের বাষ্পচাপ, ঐ তরল অথবা কঠিনের সংযোগপৃষ্ঠের সাথে সংস্পর্শের মাত্রার ওপর নির্ভরশীল নয়।
যে তাপমাত্রায় কোন তরলের বাষ্পচাপ সাধারণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের সমান হয়, ঐ তাপমাত্রাকে ঐ তরলটির সাধারণ স্ফুটনাংক বলা হয়।[১]
দ্বৈত দশা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে (যেমন- দুটি তরল দশা), প্রতিটি স্বতন্ত্র দশার বাষ্পচাপ সমান থাকে। সদৃশ কিংবা বিসদৃশ অণুসমূহের মধ্যকার শক্তিশালী আন্তঃপ্রজাতিক আকর্ষণ বল অনুপস্থিত থাকলে, বাষ্প চাপ রাউলের সূত্র (Roult's law) অনুসরণ করে। এই সূত্রানুসারে, প্রতিটি উপাদানের আংশিক চাপ হচ্ছে বিশুদ্ধ উপাদানের বাষ্পচাপ এবং ঐ মিশ্রণে তার মোল ভগ্নাশের গুণফলের সমান। মোট বাষ্পচাপ হচ্ছে প্রতিটি উপাদানের আংশিক চাপের সমষ্টির সমান।[৩]
উদাহরণ
সম্পাদনা- সুগন্ধি পণ্যে এমন সব রাসায়নিক থাকে যেগুলো ভিন্ন ভিন্ন তাপমত্রায় এবং ভিন্ন ভিন্ন হারে বাষ্পীভূত হয়, যা সুগন্ধিশিল্পে নোট হিসেবে পরিচিত।
- ভূ-পৃষ্ঠের কাছাকাছি বায়ুমণ্ডলীয় জলীয় বাষ্প পাওয়া যায়, এবং তা ক্ষুদ্র তরল ফোঁটা হিসেবে ঘনীভূত হয়ে কুয়াশা কিংবা ধোঁয়াশা'র মত ঘটনার কারণ হতে পারে।
- পারদ-বাষ্প বাতি এবং সোডিয়াম-বাষ্প বাতিতে উত্তেজিত দশার পরমাণু হতে আলো উৎপন্ন হয়।
- দাহ্য তরলসমূহকে উদ্দীপ্ত করা হলে সেগুলোর দহন হয় না[৪]; বরং যদি ঐ দাহ্য তরলের উপরস্থ বাষ্প মেঘের ঘনত্ব দাহ্যতার নিম্নসীমা এবং দাহ্যতার ঊর্ধ্বসীমার মধ্যে থাকে, তাহলে ঐ বাষ্পের দহন ঘটে।
- ই-সিগারেট বা বৈদ্যুতিক সিগারেট দ্বারা সিগারেটের ধোঁয়ার বদলে ব্যবহারকারীরা "ই-তরল" অ্যারোসল/বাষ্প সেবন করে থাকে।[২]
বাষ্প পরিমাপ
সম্পাদনাযেহেতু বাষ্প গ্যাসীয় দশায় থাকে, সেহেতু বাষ্পের পরিমাণ এর আংশিক চাপের দ্বারা পরিমাপ করা হয়। এছাড়াও, গতানুগতিক বায়মণ্ডলীয় গ্যাসসমূহের ন্যায়, কোন মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে বাষ্প ব্যারোমিতিক সূত্র মেনে চলে।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ R. H. Petrucci, W. S. Harwood, and F. G. Herring, General Chemistry, Prentice-Hall, 8th ed. 2002, p. 483–86.
- ↑ ক খ গ Cheng, T. (২০১৪)। "Chemical evaluation of electronic cigarettes"। Tobacco Control। 23 (Supplement 2): ii11–ii17। আইএসএসএন 0964-4563। ডিওআই:10.1136/tobaccocontrol-2013-051482। পিএমআইডি 24732157। পিএমসি 3995255 ।
- ↑ Thomas Engel and Philip Reid, Physical Chemistry, Pearson Benjamin-Cummings, 2006, p.194
- ↑ Ferguson, Lon H.; Janicak, Dr Christopher A. (২০০৫-০৯-০১)। Fundamentals of Fire Protection for the Safety Professional (ইংরেজি ভাষায়)। Government Institutes। আইএসবিএন 9781591919605।