রোজা
রোযা বা রোজা (ফার্সি روزہ রুজ়ে), সাউম বা সাওম (আরবি صوم স্বাউম্, অর্থঃ সংযম), বা সিয়াম হলো ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল ভিত্তির তৃতীয়। সুবহে সাদেক বা ভোরের সূক্ষ আলো থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার,পাপাচার, কামাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোযা। ইসলামী বিধান অনুসারে, প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য রমযান মাসের প্রতি দিন রোজা রাখা ফরজ, (فرض ফ্যর্দ্ব্) যার অর্থ অবশ্য পালনীয়।
শব্দ ব্যবহার
সম্পাদনাকিছু মুসলিম আলেম মূল ইসলামী আরবী শব্দ "সাওম" বা সিয়াম (صوم)-এর ব্যবহারকে অধিক উৎসাহিত করে থাকেন, যুক্তি হিসেবে তারা বলেন, সাওম শব্দটি কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে, তাই শব্দটি বলার সময় প্রতি হরফে দশ নেকি করে তিন হরফে মোট ৩০ নেকি সাওয়াব পাওয়া যাবে, যা রোজা বা অন্যান্য অ-কুরআনীয় প্রতিশব্দ উচ্চারণে পাওয়া যাবে না। কুরআনীয় শব্দ বলায় প্রতি হরফে দশ নেকির ক্ষেত্রে তারা ইসলামী নবী মুহাম্মদের উক্ত হাদীসটি পেশ করেন,
রাসূল (সা.) বলেছেন,
مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، لَا أَقُولُ الم حَرْفٌ، وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ
‘আল্লাহ তাআলার কিতাবের একটি হরফ যে ব্যক্তি পাঠ করবে তার জন্য এর সওয়াব আছে। আর সওয়াব হয় তার দশ গুণ হিসেবে। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ, বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।’
— [সুনানে তিরমিযি, হাদিস: ২৯১০]
রোজার ফযিলত
সম্পাদনা- আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ঈমানের সাথে ছাওয়াবের আশায় যে ব্যক্তি রোযা পালন করে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়।”[১]
- আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “শাইতান ও দুষ্ট জিনদেরকে রামাযান মাসের প্রথম রাতেই শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয় এবং এর দরজাও তখন আর খোলা হয় না, খুলে দেওয়া হয় জান্নাতের দরজাগুলো এবং এর একটি দরজাও তখন আর বন্ধ করা হয় না। (এ মাসে) একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকেনঃ হে কল্যাণ অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাসক্ত! বিরত হও। আর বহু লোককে আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ হতে এ মাসে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক রাতেই এরূপ হতে থাকে।”[২]
- আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহর মর্জি হলে আদম সন্তানের প্রতিটি সৎকাজের প্রতিদান দশ গুণ থেকে সাত শত গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। আল্লাহ্ বলেনঃ তবে রোযা ব্যতীত, তা আমার জন্যই (রাখা হয়) এবং আমিই তার প্রতিদান দিবো। সে তার প্রবৃত্তি ও পানাহার আমার জন্যই ত্যাগ করে। রোযাদারের জন্য দু’টি আনন্দঃ একটি আনন্দ তার ইফতারের সময় এবং আরেকটি আনন্দ রয়েছে তার প্রভু আল্লাহর সাথে তার সাক্ষাতের সময়। রোযাদার ব্যক্তির মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট কস্তুরীর ঘ্রাণের চেয়েও অধিক সুগন্ধময়।”[৩]
- ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “সিয়াম এবং কুরআন বান্দার জন্য শাফা‘আত করবে। সিয়াম বলবে, হে রব! আমি তাকে দিনে খাবার গ্রহণ করতে ও প্রবৃত্তির তাড়না মিটাতে বাধা দিয়েছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার শাফা‘আত কবূল করো। কুরআন বলবে, হে রব! আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার সুপারিশ গ্রহণ করো। অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবূল করা হবে।”[৪]
উৎপত্তি
সম্পাদনামূল কুরআনীয় ইসলামী আরবিতে ইসলামী উপবাসের নাম সাওম, বহুবচনে সিয়াম, যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে সংযম বা আত্মনিয়ন্ত্রণ বা বিরত থাকা। রোজা শব্দটি ফারসি শব্দ, যা এসেছে আদি-ইরানীয় ধাতুমূল রোওচাকাহ থেকে, যার অর্থ উপবাস, যা আবার এসেছে ইন্দো-ইরানীয় ধাতুমূল রোচস (रोचस्) থেকে,[৫] যার অর্থ দিন বা আলো। ফারসি ভাষায় সিয়ামের প্রতিশব্দ হিসেবে রোজা ব্যবহৃত হয়, যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য ভাষার মত কালক্রমে বাংলা ভাষাতেও শত শত বছর আগে থেকে এখন পর্যন্ত সাওম বা সিয়াম নামক ইসলামী উপবাস বোঝানোর জন্য সমধিকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার,কামাচার, পাপাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস ও অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত থাকার নাম সাওম বা রোজা।
ইতিহাস
সম্পাদনাকুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে,
"হে যারা ঈমান এনেছ তোমাদের ওপর রোযা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে করে তোমরা তাক্ওয়া অবলম্বন করতে পার"। (সূরা বাকারা: ১৮৩)[৬]
হযরত আদম যখন নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার পর তাওবাহ করেছিলেন তখন ৩০ দিন পর্যন্ত তার তাওবাহ কবুল হয়নি। ৩০ দিন পর তার তাওবাহ কবুল হয়। তারপর তার সন্তানদের উপরে ৩০টি রোযা ফরয করে দেয়া হয়।[৭]।
নূহ (আ.)-এর যুগেও রোজা ছিল। কারণ, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন:
হযরত নূহ (আ.) ১ লা শাওয়াল ও ১০ জিলহজ ছাড়া সারা বছর রোযা রাখতেন।
— ইবনে মাজাহ ১৭১৪ (সনদ দুর্বল)[৮]
হযরত ইবরাহীমের যুগে ৩০টি রোজা ছিল বলে কেউ কেউ লিখেছেন।
হযরত দাউদ (আ.) এর যুগেও রোযার প্রচলন ছিল। হাদিসে বলা হয়েছে, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় রোযা হযরত দাউদ (আ.)-এর রোযা। তিনি একদিন রোযা রাখতেন এবং একদিন বিনা রোযায় থাকতেন।[৯]
আরববাসীরাও ইসলামের পূর্বে রোযা সম্পর্কে কমবেশী ওয়াকিফহাল ছিল। মক্কার কুরাইশগণ অন্ধকার যুগে আশুরার (অর্থাৎ ১০ মুহররম) দিনে এ জন্য রোযা রাখতো যে, এই দিনে খানা কাবার ওপর নতুন গেলাফ চড়ানো হতো।[১০][১১] মদীনায় বসবাসকারী ইহুদীরাও পৃথকভাবে আশুরা উৎসব পালন করতো।[১২] অর্থাৎ ইহুদীরা নিজেদের গণনানুসারে সপ্তম মাসের ১০ম দিনে রোযা রাখতো।[১৩]
শর্ত
সম্পাদনারোজার কিছু মৌলিক আচার আছে। যা ফরজ বলে চিহ্নিত। সুস্থ-সবল প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমকে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। কিন্তু শারীরিক অসমর্থতার কারণে সে এ দায়িত্ব থেকে আপাতভাবে মুক্তি পেতে পারে। এর প্রতিবিধানে রয়েছে কাজা ও কাফফারার বিধান। নিচে রোজার ফরজ ও শর্তগুলো দেওয়া হলো-
রোজার ৩ ফরজ :
- নিয়ত করা
- সব ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকা
- যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা।
রোজা রাখার ৪ শর্ত :
- মুসলিম হওয়া
- বালেগ হওয়া
- অক্ষম না হওয়া
- ঋতুস্রাব থেকে বিরত থাকা নারী।
প্রকারভেদ
সম্পাদনারোজা পাঁচ প্রকার।
- ফরজ রোজা: যা আবার চার প্রকার-
- রমজান মাসের রোজা।
- কোন কারণ বশত রমজানের রোজা ভঙ্গ হয়ে গেলে তার কাযা আদায়ে রোজা।
- শরীয়তে স্বীকৃত কারণ ব্যতীত রমজানের রোজা ছেড়ে দিলে কাফ্ফারা হিসেবে ৬০টি রোজা রাখা।
- রোজার মান্নত করলে তা আদায় করা।
- ওয়াজিব রোজা: নফল রোজা রেখে ভঙ্গ করলে পরবর্তীতে তা আদায় করা ওয়াজিব।
- সুন্নত রোজা: মহরম মাসের নয় এবং দশ তারিখে রোজা রাখা।
- মুস্তাহাব রোজা: প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, এবং ১৫ তারিখে, প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারে, কোন কোন ইমামের মতে শাওয়াল মাসে পৃথক পৃথক প্রতি সপ্তাহে দুটো করে ছয়টি রোজা রাখা মোস্তাহাব। তবে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতে এক সাথে হোক কিংবা পৃথক পৃথক হোক শাওয়ালের ছয়টি রোজা মুস্তাহাব।
- নফল রোজা: মোস্তাহাব আর নফল খুব কাছাকাছির ইবাদত। সহজ অর্থে নফল হলো যা ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত নয় এমন ইবাদত পূণ্যের নিয়তে করা। রোজার ক্ষেত্রেও তাই। [১৪]
রোজা ভঙ্গের কারণ
সম্পাদনা১. ইচ্ছা করে বমি করা
২. বমির বেশির ভাগ মুখে আসার পর তা গিলে ফেলা
৩. মেয়েদের মাসিক ও সন্তান প্রসবের পর ঋতুস্রাব
৪. ইসলাম ত্যাগ করলে
৫. গ্লুকোজ বা শক্তিবর্ধক ইনজেকশন বা সেলাইন দিলে
৬. প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে ওষুধ বা অন্য কিছু শরীরে প্রবেশ করালে
৭. রোজাদারকে জোর করে কেউ কিছু খাওয়ালে
৮. ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে সূর্যাস্তের আগে ইফতার করলে
৯. মুখ ভরে বমি করলে
১০. ভুলবশত কোনো কিছু খেয়ে, রোজা ভেঙে গেছে ভেবে ইচ্ছা করে আরও কিছু খেলে
১১. বৃষ্টির পানি মুখে পড়ার পর তা খেয়ে ফেললে
১২. কান বা নাক দিয়ে ওষুধ প্রবেশ করালে
১৩. জিহ্বা দিয়ে দাঁতের ফাঁক থেকে ছোলা পরিমাণ কোনো কিছু বের করে খেয়ে ফেললে
১৪. অল্প বমি মুখে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে তা গিলে ফেললে
১৫. রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় অজুতে কুলি বা নাকে পানি দেয়ার সময় ভেতরে পানি চলে গেলে। (ফাতাওয়ায়ে শামি ও ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি)।
যেসব কারণে রোজা মাকরুহ হয়
সম্পাদনা*বিনা ওজরে কোনো জিনিস মুখে দিয়ে চিবানো।
*গরমের কারণে বারবার কুলি করা।
*টুথ পাউডার, পেস্ট, কয়লা বা অন্য কোনো মাজন দ্বারা রোজার দিনে দাঁত পরিষ্কার করা।
*বিনা ওজরে জিহ্বা দ্বারা কোনো বস্তুর স্বাদ গ্রহণ করা। তবে বদমেজাজি স্বামীর জন্য স্ত্রীর তরকারির স্বাদ গ্রহণ করার অনুমতি আছে।
*রোজাদার অবস্থায় কারও গিবত (পরচর্চা, পরনিন্দা) করা।
*মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।
*অশ্লীল বাক্য উচ্চারণ করা কিংবা পাঠ করা।
*ঝগড়া-বিবাদ করা।
রোজা ভঙ্গ হলে করনীয়
সম্পাদনাবিনা কারণে রোজা ভঙ্গ করলে তাকে অবশ্যই কাজা-কাফফারা উভয়ই আদায় করা ওয়াজিব। যতটি রোজা ভঙ্গ হবে, ততটি রোজা আদায় করতে হবে। কাজা রোজা একটির পরিবর্তে একটি অর্থাৎ রোজার কাজা হিসেবে শুধু একটি রোজাই যথেষ্ট। কাফফারা আদায় করার তিনটি বিধান রয়েছে।
- একটি রোজা ভঙ্গের জন্য একাধারে ৬০টি রোজা রাখতে হবে। কাফফারা ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজার মাঝে কোনো একটি ভঙ্গ হলে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।
- যদি কারও জন্য ৬০টি রোজা পালন সম্ভব না হয় তবে ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা খাওয়াতে হবে। কেউ অসুস্থতাজনিত কারণে রোজা রাখার ক্ষমতা না থাকলে ৬০ জন ফকির, মিসকিন, গরিব বা অসহায়কে প্রতিদিন দুই বেলা করে পেটভরে খাওয়াতে হবে।
- গোলাম বা দাসী আজাদ করে দিতে হবে।
যেসব কারণে রমজান মাসে রোজা ভঙ্গ করা যাবে কিন্তু পরে কাজা করতে হয় তা হচ্ছে
- মুসাফির অবস্থায়
- রোগ-ব্যাধি বৃদ্ধির বেশি আশঙ্কা থাকলে
- মাতৃগর্ভে সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে
- এমন ক্ষুধা বা তৃষ্ণা হয়, যাতে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকতে পারে
- শক্তিহীন বৃদ্ধ হলে
- কোনো রোজাদারকে সাপে দংশন করলে।
- মহিলাদের মাসিক হায়েজ-নেফাসকালীন রোজা ভঙ্গ করা যায়
যেসব কারণে শুধু কাজা আদায় করতে হয়
- স্ত্রীকে চুম্বন বা স্পর্শ করার কারণে যদি বীর্যপাত হয়
- ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে
- পাথরের কণা, লোহার টুকরা, ফলের বিচি গিলে ফেললে
- ডুশ গ্রহণ করলে
- বিন্দু পরিমাণ কোন খাবার খেলে তবে অনিচ্ছাকৃত ভাবে বা মনের ভুলে খেলেও রোজা ভাংবে না তবে মনে আসা মাত্রই খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে
- নাকে বা কানে ওষুধ দিলে (যদি তা পেটে পেঁৗছে)
- মাথার ক্ষতস্থানে ওষুধ দেওয়ার পর তা যদি মস্তিষ্কে বা পেটে পেঁৗছে
- যোনিপথ ব্যতীত অন্য কোনোভাবে সহবাস করার ফলে বীর্য নির্গত হলে
- স্ত্রী লোকের
ওষুধ দিলে
মেরু অঞ্চলসমূহে
সম্পাদনাইসলামে মেরু অঞ্চলসমূহে রোজা রাখা সম্পর্কে সরাসরি কিছুই বলা হয় নি। তবে সৌদি আরব রাজ্যের উর্ধতন বিশেষজ্ঞ পরিষদের মতামত অনুযায়ী, দজ্জাল সম্পর্কে একটি হাদিস রয়েছে[১৫], যেখানে প্রমাণিত হয় যে প্রতি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রোজা এবং একই সঙ্গে নামাজ উপক্রম করতে হবে।[১৬]
এই সমস্যার কারণ হলো গ্রীষ্মকালে মেরু অক্ষাংশে নিশীথ সূর্য এবং শীতকালে মেরু নিশি দেখা যায়। এই প্রাকৃতিক ঘটনাটি সংঘটিত হয় কারণ গ্রীষ্মকালে পৃথিবীর অক্ষাংশ সূর্যের দিকে হেলে থাকে এবং শীতকালে সূর্য থেকে দূরে সরে যায়, এই কারণে মেরু অঞ্চলসমূহে প্রতি ছয়-মাস যাবৎ টানা সূর্যের আলো দেখা যায়। ইসলামের প্রাথমিক যুগের আদি মুসলমানরা মেরু অঞ্চলে বসবাস করতেন না, তারা উপক্রান্তীয় অঞ্চলে বসবাস করতেন যেখানে সূর্য দিনের বেলায় সরাসরি উপরিভাগে থাকে এবং রাতে অস্ত যায়। এজন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের এই ঘটনাগুলির অভিজ্ঞতা হয় নি।
উদ্দেশ্য
সম্পাদনারোজা রাখার উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা, পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং নিজেদের কামনা-বাসনা নিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পরহেজগারি বা তাকওয়া বৃদ্ধি করা।
কুরআনে বলা হয়েছে,
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো"।
— সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩
আরও বলা হয়েছে,
"রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।"
— সূরা বাকারা: ১৮৫[১৭]
‘তাকওয়া’ শব্দটির মূল অর্থ ‘রক্ষা করা।’ এর অনুবাদ করা হয়েছে নানাভাবে। যেমন পরহেজগারি, আল্লাহর ভয়, দ্বীনদারি, সৎ কর্মশীলতা, সতর্কতা প্রভৃতি। রোজা ঢালের মতো কাজ করে, যা গোনাহের হাত থেকে বাঁচায়।[১৮]
উপকারিতা
সম্পাদনারমজানের একটি বিশেষ ফজিলত বা মাহাত্ম্য হচ্ছে,এই পবিত্র রমজান মাসে আল কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। রমজান মাসের রোজা মানুষকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি দেয়,মানুষের কুপ্রবৃত্তি ধুয়ে মুছে দেয় এবং আত্মাকে দহন করে ঈমানের শাখা প্রশাখা সঞ্জিবীত করে। সর্বোপরি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। এই মর্মে মহানবী ইরশাদ করেছেন,
"রোজাদারের জন্য দুটি খুশি। একটি হলো তার ইফতারের সময়, আর অপরটি হলো আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।"
— (বুখারী ও মুসলিম)
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) | হাদিস: ১৯০১ [ ]"। www.hadithbd.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-১৯।
- ↑ "সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) | হাদিস: ৬৮২ [ ]"। www.hadithbd.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-১৯।
- ↑ "সুনান ইবনু মাজাহ | হাদিস: ১৬৩৮ [ ]"। www.hadithbd.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-১৯।
- ↑ "মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) | হাদিস: ১৯৬৩ [ ]"। www.hadithbd.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-১৯।
- ↑ "روزه"। Wiktionary (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৪-০২।
- ↑ কুরআন ২:১৮৩
- ↑ তারেক., Zahedul Ahsan Tareque, জাহেদুল আহছান। নামাযের মর্মকথা / Namazer Mormokotha (Bengali)। আইএসবিএন 978-1-310-38397-7। ওসিএলসি 1157209081।
- ↑ টেমপ্লেট:Ihadis
- ↑ নাসাঈ ১ম খণ্ড ২৫০ পৃষ্ঠা, বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১৭৯ পৃষ্ঠা
- ↑ মুসনাদে ইবনে হাম্বল: ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃ: ২৪৪
- ↑ টেমপ্লেট:Ihadis, তাওহীদ পাবলিকেশন্স
- ↑ তারেক., Zahedul Ahsan Tareque, জাহেদুল আহছান। নামাযের মর্মকথা / Namazer Mormokotha (Bengali)। আইএসবিএন 978-1-310-38397-7। ওসিএলসি 1157209081।
- ↑ "রোজার ইতিহাস এবং শুরু"।
- ↑ Teixeira., Torres, Aldivan। ভবিষ্যৎ দ্রষ্টার গল্প সামগ্রী। আইএসবিএন 978-88-7304-817-6। ওসিএলসি 1157209274।
- ↑ "SahihMuslim.Com"। www.sahihmuslim.com। ৫ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০২১।
- ↑ "How to pray and fast in countries where the day or night is continuous - Islam Question & Answer"।
- ↑ Dr. Enamul Haque (২০২০-১১-২৫)। "ঈসা আ.-এর পুনরাগমন: কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে একটি পর্যালোচনা"। Bangladesh Journal of Integrated Thoughts। 12 (17)। আইএসএসএন 2788-5925। ডিওআই:10.52805/bjit.v12i17.161।
- ↑ "রোজার উদ্দেশ্য"। ২৩ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০১৭।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- নদভী, আবুল হাসান আলী (১৯ এপ্রিল ২০২১)। "রোজা অভ্যাস নাকি ইবাদত! উদ্দেশ্য কী?"। যুগান্তর।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- সিয়াম, কিয়াম, যাকাত বিষয়ক বই - "রমযান মাসের ৩০ আসর"